MD Ibrahim Adham MesuNov 1, 2024
জার্মানি বর্তমানে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এর মূল কারণ হলো তাদের উচ্চমানের শিক্ষা ব্যবস্থা, তুলনামূলক কম টিউশন ফি, ও প্রচুর স্কলারশিপের সুযোগ। নিচে আমরা জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো আলোচনা করবো।
---
১. বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি মিউনিখ, হেইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি, হামবুর্গ ইউনিভার্সিটি, এবং বার্লিনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ জনপ্রিয়। আপনি প্রথমে নিজের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা করে দেখুন এবং কোনটিতে আপনার পড়ার সুযোগ ভালো তা যাচাই করুন। সাধারণত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি, এবং বায়োসাইন্স বিষয়ে পড়ার জন্য বেশি আগ্রহী থাকে।
২. ভাষার দক্ষতা: IELTS/TOEFL
জার্মানির বেশিরভাগ ইংরেজি-মাধ্যমের কোর্সের জন্য IELTS প্রয়োজন হয়। সাধারণত, IELTS-এ অন্তত ৬.৫ স্কোর পেলে ভালো হয়, তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ৬ স্কোরও গ্রহণ করে। এছাড়া TOEFL-এ ৯০ বা তার বেশি স্কোর প্রয়োজন হতে পারে। কিছু কোর্সের জন্য জার্মান ভাষার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে আপনি জার্মান ভাষায় B2 বা C1 স্তরের দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।
৩. টিউশন ফি
জার্মানিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি প্রায় নেই বললেই চলে। কিছু নামমাত্র সেমেস্টার ফি থাকে যা €১৫০ থেকে €৩০০ পর্যন্ত হতে পারে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি রয়েছে এবং তা প্রোগ্রাম অনুযায়ী ভিন্ন হয়।
৪. স্কলারশিপের সুযোগ
DAAD স্কলারশিপ, ইরাসমাস প্লাস, এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্কলারশিপ রয়েছে যেগুলো বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা পেতে পারে। স্কলারশিপ পেতে হলে আবেদন করার জন্য আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং গবেষণার পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ব্লক অ্যাকাউন্ট
জার্মানিতে থাকার জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখাতে প্রায় €১১,০০০ (প্রতি মাসে প্রায় €৯৩৪) জার্মান ব্যাংকে ব্লক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। এই অর্থ আপনি জার্মানিতে যাওয়ার পর প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে তুলতে পারবেন।
৬. ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে করতে হয়:
ভিসা আবেদন জমা: প্রথমে জার্মানির ঢাকার দূতাবাসে একটি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আবেদন করতে হয়। দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের তালিকা সংগ্রহ করুন।
ডকুমেন্ট প্রস্তুতি: অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার, ব্লক অ্যাকাউন্টের প্রমাণ, স্বাস্থ্য বীমা, এবং ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট প্রস্তুত করুন।
ইন্টারভিউ: ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার পর দূতাবাসে একটি সাক্ষাৎকারের জন্য উপস্থিত হতে হয়।
প্রসেসিং সময়: ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য সাধারণত ৮-১২ সপ্তাহ সময় লাগে, তবে বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে অপেক্ষা সময় আরও বেশি হতে পারে।
৭. কাজের অনুমতি ও পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ
জার্মানিতে পড়াশোনা করার সময় পার্ট-টাইম কাজ করার সুযোগ থাকে। EU দেশগুলোর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। এভাবে কাজ করার মাধ্যমে আপনার খরচ মেটানোর পাশাপাশি অভিজ্ঞতা অর্জনও করতে পারবেন।
৮. বর্তমান পরিস্থিতি ও অপেক্ষার সময়
বর্তমানে জার্মানিতে শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা প্রসেসিং কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে (২৩/২৪ মাস) কারণ অনেক শিক্ষার্থী জার্মানিতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে যতটা সম্ভব দ্রুত পরিকল্পনা করুন এবং যথাযথভাবে সকল ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখুন।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা
অর্থনৈতিক প্রস্তুতি: ব্লক অ্যাকাউন্টের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এবং অন্যান্য খরচের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
ভাষার দক্ষতা: আপনি যদি জার্মান ভাষায় দক্ষ হন, তাহলে আপনার জন্য আরও অনেক কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সুযোগ উন্মুক্ত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কলারশিপ প্রোগ্রাম: জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কলারশিপ প্রোগ্রামগুলো ভালোভাবে মূল্যায়ন করুন।
জার্মানিতে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এ সকল বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা উচিত। সঠিক প্রস্তুতি এবং পরিশ্রমে
র মাধ্যমে আপনি জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে পারেন।